হরতালের অজুহাতে চলছে মহাসড়কে সিএনজি

মহাসড়কে খোলা ট্রাকে স্ক্র্যাপ পরিবহন, নির্বিকার হাইওয়ে পুলিশ

Passenger Voice    |    ১২:১০ পিএম, ২০২৪-০১-২৩


মহাসড়কে খোলা ট্রাকে স্ক্র্যাপ পরিবহন, নির্বিকার হাইওয়ে পুলিশ

জয়নাল আবেদীনঃ বিপজ্জনক স্ক্র্যাপ, লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহনের সময় তা ঢেকে বা কনটেইনারের ভেতরে আনা–নেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা মানা হচ্ছে না। ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, লরিতে খোলা অবস্থায় পরিবহন করা এসব স্ক্র্যাপ রাস্তায় কোথাও ঝাঁকুনির সময় অথবা গাড়ির উপরে থাকা ধারালো ধাতব বস্তু বাতাসের তোড়ে সড়কে ছিটকে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া গাড়ির ওপর থেকে ধারালো লোহা সড়কে পড়ে অন্য যানবাহনের চাকা ছিদ্র হওয়াসহ নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিত্যদিনের। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেইট থেকে ফেনী লালপোল এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে বেশ কয়েকটি ইস্পাত তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে কেউ যেন আইন মানতে চাইনা। বিএসআরএম, কেএসআরএম, জিপিএইচসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি অনিয়ম করে যাচ্ছে। আবার এই ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, লরিতে খোলা অবস্থায় স্ক্র্যাপ পরিবহন করা সময় ডিএবি (দিদার এন্ড ব্রাদার্স) নামের স্টিকার ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিএবি প্রতিষ্ঠানের মালিক সীতাকুণ্ড থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম। স্থানীয় সংসদ সদস্যের গাড়ি হওয়ায় এই গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাগণ। 

গতকাল ২২ জানুয়ারী দুপুরে বারোআউলিয়া হাইওয়ে থানার আয়োজনে “পুলিশ জনতার, জনতাই পুলিশ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় ব্যক্তিরা এইসব বক্তব্য তুলে ধরেন। 

এছাড়াও মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের থ্রি-হুইলার সিএনজি অটোরিকশা দেদারসে চলাচলের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে মহাসড়কে সিএনজি চলাচলের বিষয়টি খোদ স্বীকার করেছেন বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ।

অফিসার ইনচার্জ আরো বলেন, আমি সদ্য বারআউলিয়া হাইওয়ে থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেছি। অনেকে অভিযোগ করেছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি-অটোরিকশা অবাধে চলছে। মূলত হরতাল অবরোধের কারণে মহাসড়কে কিছু যানবাহন চলাচলে শিথিলতা ছিল। কিন্তু আমরা মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। যেসব প্রতিষ্ঠানের যানবাহন মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার কারণ হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে মহাসড়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব ক্যামেরা মহাসড়কে যাত্রী নিরাপত্তা, চুরি ও ছিনতাই ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

জানা যায়, রি–রোলিং মিলের প্রধান কাঁচামালের (স্ক্র‍্যাপ লোহা) বড় একটি অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। কার্গো এবং লাইটার জাহাজে করে আনা এসব স্ক্র্যাপ লোহা চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন ঘাটে আনলোড করে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রি–রোলিং মিলে। এসব স্ক্র‍্যাপ কনটেইনারের ভেতরে কিংবা ঢাকা অবস্থায় পরিবহনের নিয়ম থাকলেও স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী ও রি–রোলিং মিল কর্তৃপক্ষ নিয়ম না মেনে খোলা ড্রাম-ট্রাক, লরিতে অনিরাপদভাবে মহাসড়কে আনা–নেওয়া করছে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ড্রাম ট্রাক ও লরির ধারণ ক্ষমতার দুই-তিন গুণ বেশি স্ক্র্যাপ বোঝাই করে জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম, কেএসআরএম-এর মতো স্বনামধন্য রি–রোলিং মিল প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, এসব স্ক্র‍্যাপবাহী গাড়ির বেপরোয়া চলাচলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের কপালে। ড্রাম ট্রাক থেকে স্ক্র্যাপ লোহা ছিটকে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এলাকাবাসী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও রি–রোলিং মিল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইস এম হোসাইন বলেন, ‘ঢাকায় দিনের বেলা ভারী যানবাহন চলাচলই করতে পারে না। কিন্তু চট্টগ্রামে দেদারসে চলছে। ২-৩ বছর আগে দিনের বেলা ট্রাক-লরি চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করা হতো। তাতে একজন এমপির স্বার্থে আঘাত আসে, তার ঝামেলার কারণে এসব ট্রাক-লরি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দিনের বেলায়ও চলাচল করছে। আর অনিরাপদভাবে যেসব যানবাহন এসব স্ক্র‍্যাপ পরিবহন করছে তার মালিকও একজন এমপি।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলির কাছে প্যাসেঞ্জার ভয়েস ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, লরিতে খোলা অবস্থায় স্ক্র্যাপ পরিবহন করা বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের পক্ষে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন বুঝতে পারেনি বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেয়। পরে বারবার ফোন করা হলেও আর রিসিভ করেন নি।